October 13, 2025
5

আসামের মাকুম কয়লাক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ বছরের পুরনো জীবাশ্ম পাতা আবিষ্কার করেছেন, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মধ্যে একটি প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত যোগসূত্র প্রকাশ করে।

লখনউয়ের বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওসায়েন্সেস (বিএসআইপি) এর গবেষকরা এই জীবাশ্ম পাতাগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই জীবাশ্ম পাতাগুলো ‘নোথোপেজিয়া’ গণের আধুনিক উদ্ভিদের সাথে আশ্চর্যজনকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, যে প্রজাতিগুলি এখন কেবল ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় পাওয়া যায়। রিভিউ অফ প্যালিওবোটানি অ্যান্ড প্যালিনোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে উত্তর-পূর্ব ভারতে একসময় এমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু ছিল যা এই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত ছিল।

গবেষণা অনুসারে, টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে হিমালয়ের উত্থানের মতো বড় ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলো এই অঞ্চলের পরিবেশকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং বাতাসের ধরণের এই পরিবর্তনগুলি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শীতল করে তোলে। ফলস্বরূপ, নোথোপেজিয়ার মতো অনেক গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রজাতি এই অঞ্চলের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে এবং অবশেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বর্তমানে, নোথোপেজিয়া পরিবেশগতভাবে স্থিতিশীল পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় টিকে আছে, যা অতীতের গ্রীষ্মমন্ডলীয় যুগের জীবন্ত নিদর্শন হিসেবে কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা CLAMP পদ্ধতির মতো উন্নত কৌশল ব্যবহার করে নিশ্চিত করেছেন যে উত্তর-পূর্ব ভারতে অলিগোসিন যুগের শেষের জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র ছিল, যা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বর্তমান অবস্থার মতোই ছিল।

গবেষণার সহ-লেখক ডঃ হর্ষিতা ভাটিয়া বলেন, “এই জীবাশ্ম আবিষ্কার অতীতের একটি জানালা যা আমাদের ভবিষ্যৎ বুঝতে সাহায্য করে।” তিনি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মতো জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলিকে রক্ষা করার জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেন, কারণ এগুলো প্রাচীন বংশধরদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।

এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্তি এবং প্রজাতির স্থানান্তর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলমান প্রক্রিয়া, যা বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। উদ্বেগজনকভাবে, সাম্প্রতিক পূর্বাভাসগুলি সতর্ক করে দিচ্ছে যে আধুনিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৬০% এরও বেশি গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির সম্মুখীন হতে পারে, যার ফলে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ২০৫০ সালের মধ্যে তার সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *