
গুয়াহাটি, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অসমের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক উদ্বেগজনক চিত্র। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রাজ্যে মোট ৩৬,৮০০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫,১৬৩ জন মানুষ — যা উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে অসমে ৮,৩৫০টি দুর্ঘটনা এবং ৩,২০৮টি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যান চলাচল কম থাকলেও দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৬,৫৯৫ এবং মৃত্যু ২,৬২৯ জন। পরবর্তী বছরগুলিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পায় — ২০২১ সালে ৭,৪১১, ২০২২ সালে ৭,০২৩ এবং ২০২৩ সালে ৭,৪২১টি দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩,২৯৬, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.১% বেশি।
দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অতিরিক্ত গতিবেগ, ভুল দিক থেকে গাড়ি চালানো এবং বেপরোয়া চালনার প্রবণতা। অসমে প্রতি ১০০টি দুর্ঘটনার মধ্যে গড়ে ৪৪.৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা জাতীয় গড় ৩৬-এর তুলনায় অনেক বেশি।
প্রতিবেদন আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হারের দিক থেকে অসম উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন ত্রিপুরা (৫৭৭ দুর্ঘটনা) ও মণিপুর (৩৯৮ দুর্ঘটনা)-এর তুলনায় অনেক এগিয়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অসমে সড়ক নকশা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিষেবার অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
মন্ত্রক দুর্ঘটনা রোধে চারটি মূল স্তম্ভ — শিক্ষা, প্রকৌশল, আইন প্রয়োগ এবং জরুরি চিকিৎসা — ভিত্তিক একটি কৌশল গ্রহণ করেছে। ইলেকট্রনিক রিপোর্টিং, যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র এবং সড়ক নিরাপত্তা নিরীক্ষার মতো প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, বাস্তবভিত্তিক সচেতনতা ও কঠোর নজরদারি ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয় — এটি হাজার হাজার পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতির প্রতিচ্ছবি, যা রাজ্যের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনার দাবি জানায়।