
ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় যে ৩টি নতুন ফৌজদারি আইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে ওয়াকিবহল করতে হবে যাতে মানুষ আইনের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হন এবং প্রয়োজনে এর সুবিধা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আরক্ষা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এফ আই আর থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আজ প্রজ্ঞাভবনে আরক্ষা প্রশাসন আয়োজিত ‘ইনভেস্টিগেশন এন্ড প্রশিকিউশন আন্ডার নিউ ক্রিমিনাল এন্ড এন ডি পি এস অ্যাক্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা। কর্মশালায় শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকগণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকগণ, ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিগণ সহ আইনজীবীগণও উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন ফৌজদারি আইনগুলি নাগরিক কেন্দ্রিক, সহজলভ্য এবং দক্ষ বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই আইন অনুযায়ী এখন যেকোন অভিযোগকারী বাড়িতে বসেই ডিজিট্যালি এফ আই আর দায়ের করতে পারবেন।
এই ৩টি আইন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই আইনগুলি অনুযায়ী অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে প্রতি ৯০ দিনে মামলার আপডেট দিতে হবে। তাছাড়া অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত উভয়কেই মামলার ১৪ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান করতে হবে। এছাড়া এই আইনে ১৫ বছরের কম বা ৬০ বছরের বেশী বয়সী নারী, ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের থানায় যাওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের সাত দিনের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তথ্য রেকর্ডের দুই মাসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের তদন্ত শেষ করতে হবে বলে কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী জানান। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে প্রমান আহরণ, সময়মত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উপর এই আইনগুলিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্য অপরাধের হারের বিচারে দেশের মধ্যে নীচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অবৈধ নেশা সামগ্রী পাচারের সাথে যুক্তদের আগের সরকারের তুলনায় অধিক হারে বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভবপর হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন এই কর্মশালা আগামীদিনে রাজো ৩টি নতুন ফৌজদারি আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কর্মশালায় আলোচনা কালে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, গত ১ জুলাই ২০২৪ সালে এই আইন প্রণয়ন হবার পর থেকে এই রাজ্যে সংশ্লিষ্ট সবাই প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। এই আইন প্রণয়নের হার রাজ্যে সন্তোষজনক। সময় সময় প্রশাসনের সর্বোচ্চস্তরে এই আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বিশদে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, এই আইনগুলি প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য দেশের মধ্যে উপরের দিকে রয়েছে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ বলেন, এই আইনগুলোর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেকোন অভিযোগের তদন্ত বিচারব্যবস্থা ও সাজার হার বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র সচিব অভিষেক সিং। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, স্বরাস্ট্র (জেল) সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিতো এবং আইন সচিব সঞ্জয় ভট্টাচার্য। কর্মশালার দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩টি নতুন ফৌজদারি আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞগণ।