
আসাম সরকারের প্রস্তাবিত কুলসি নদীর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বোরদুয়ার স্যাটেলাইট টাউনশিপ প্রকল্পের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পালাশবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বোরদুয়ার বাগান ময়দানে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সভায় শত শত মানুষ অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, এই প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় আদিবাসী ও ভূমিহীন জনগণের উচ্ছেদ অনিবার্য হবে এবং কুলসি নদীর জীববৈচিত্র্য ও চন্দুবি হ্রদের পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা স্লোগান তোলেন—“আম্বানির টাউনশিপ চাই না”, “কুলসি নদী বাঁচাও”, “উচ্ছেদ বন্ধ করো”।
ভূমি পাট্টা ও বনাধিকার আইন অনুযায়ী অধিকার দাবি
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ভূমি পাট্টা দাবি কমিটির আহ্বায়ক গোবিন্দ রাভা বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিরোধিতা করছি না, কিন্তু এই প্রকল্পের নামে আমাদের জমি কেড়ে নেওয়া চলবে না। আমাদের বনাধিকার আইনের আওতায় ২৯.৫ বিঘা পর্যন্ত জমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
পরিবেশগত বিপদের আশঙ্কা
পরিবেশবিদ ও আন্দোলনকারীরা জানান, কুলসি নদীতে প্রস্তাবিত ৫৫ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল ধ্বংস করবে এবং চন্দুবি হ্রদের সঙ্গে নদীর প্রাকৃতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। তাঁরা দাবি করেন, এই প্রকল্পের ফলে প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আইনি ও সাংবিধানিক দিক তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা
গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী কিশোর কুমার কলিতা বলেন, “যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে সরকার তাঁদের উচ্ছেদ করতে পারবে না। জমির দলিল সংরক্ষণ ও বনাধিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পগুলি সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে থাকা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা
সাবেক আরএসইউ সভাপতি রামেন সিং রাভা বলেন, “আমরা শকুন নই, ঈগলের মতো উঁচুতে উড়ে থাকি। আমাদের জমি ছাড়ব না। এই টাউনশিপ চাই না, চাই জমির পাট্টা।” তিনি রাভা হাসং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের প্রধান টংকেশ্বর রাভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন, প্রয়োজনে তাঁরা রাস্তায় অবরোধ, গণঅনশন ও বৃহত্তর গণআন্দোলনের পথে হাঁটবেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী—রাভা, গারো, আদিবাসী—একত্রে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।