April 17, 2025
pst 6

আমেরিকা ও চিনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। শুল্ক যুদ্ধের আবহে এক গুচ্ছ দুর্লভ খনিজ, প্রাকৃতিক চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল চিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। চিনের এই পদক্ষেপে বিরল ধাতু, মৌল এবং ম্যাগনেটের সাপ্লাই চেন বড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে গাড়ি, এরোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর এবং মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি বড় সমস্যায় পড়তে পারে। কেবল আমেরিকা নয়, অন্য দেশগুলিকেও সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে।

গাড়ি থেকে ড্রোন, রোবট থেকে মিসাইল—এই সমস্ত জিনিসের অ্যাসেম্বলিংয়ের জন্য শক্তিশালী ম্যাগনেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন রকমের বৈদ্যুতিক মোটর তৈরিতে এই ম্যাগনেটের প্রয়োজন হয়। ওই সব মোটর ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ড্রোন, রোবট, মিসাইল, স্পেসক্রাফ্ট তৈরির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ক্রিটিক্যাল কাজে ম্যাগনেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে বিরল কিছু মৌলের দরকার পড়ে। সেগুলি খুবই দুর্লভ। বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই তা পাওয়া যায়। লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে ক্যাপাসিটর, কম্পিউটার চিপ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্ভার তৈরি- বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ওই সব মৌলের দরকার পড়ে। চিন এ সবের সরবরাহ বন্ধ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। আমেরিকার ডিফেন্স সেক্টরের বিভিন্ন কাজও এর জেরে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

২ এপ্রিল ট্রাম্পের ট্যারিফ ঘোষণা থেকেই এই সব সমস্যার সূত্রপাত। ২ এপ্রিলের পর থেকে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমেরিকা চিনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে। চিনও পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। ট্রাম্পের রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ ঘোষণার পর চিন ৬টি অতি বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এই সমস্ত মৌলের রপ্তানি নিয়ে নতুন নীতি তৈরির পথে বেজিং হাঁটছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সমস্ত বিরল মৌলের ৯০ শতাংশই উৎপাদন করে চিন। তাই বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ব্যাপারে চিনের উপর নির্ভরশীল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, ম্যাগনেট-সহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক। এর জেরে প্রচুর মৌল শিপমেন্টের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে রয়েছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া চিন থেকে এই ধরনের কোনও পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। বেজিংয়ের এই সিদ্ধান্তে আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে মার্কিন মুলুকে। সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামমের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিও বড় সঙ্কটের মধ্যে পড়তে পারে।

আমেরিকার ক্রিটিক্যাল মিনেরালস অ্যাডভাইসরি কমিটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল প্ল্যাকার্ড জানিয়েছেন, চিন বিরল মৌল রপ্তানি বন্ধ করার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকায়। এ ব্যাপারে আমেরিকার মাইনিং শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রথম সারির এক সংস্থার কর্তা বলেছেন, ‘ড্রোনস এবং রোবোটিক্স ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠতে চলেছে। এই সব যুদ্ধাস্ত্র তৈরির উপাদানের সাপ্লাই চেন ব্যাহত হলে চিন্তার কারণ রয়েছে।’ সে জন্য আমেরিকা এই সব বিরল মৌল খননের কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমির কাছে কিছু বিরল মৌলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে আমেরিকা প্রশ্নাতীত ভাবে গোটা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে এগিয়ে। কিন্তু এই সব মৌলের অভাবে এই জয়যাত্রাও স্তব্ধ হতে পারে। শুল্ক নিয়ে অনড় ট্রাম্পে কী ভাবে এ বিষয়ের মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *