
গুয়াহাটি, ১৮ জুলাই — অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বৃহস্পতিবার লোক সেবা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উরিয়ামঘাটে ব্যাপক জমি দখলের অভিযোগ তুলে ধরেন এবং পাইকান উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে সংঘর্ষের জন্য কংগ্রেসকে সরাসরি দায়ী করেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী উরিয়ামঘাট অঞ্চলে প্রায় ৩,০০০ বিঘা বনভূমি অবৈধভাবে দখল করে সুপারি ও পান পাতার চাষ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি ৩০০ থেকে ৫০০ বিঘা বনভূমি দখল করেছে। আগে এখানে শাল ও সেগুন গাছ ছিল, এখন তা উধাও।” ড্রোন চিত্রের মাধ্যমে এই দখলের প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, অধিকাংশ দখলদার স্থানীয় নন, বরং লাহরিঘাট, ধিং, নগাঁও, বটদ্রবা ও মণিপুর থেকে আগত। অনেকে নদীভাঙনের শিকার বলে দাবি করলেও মুখ্যমন্ত্রী তা নাকচ করে বলেন, “তাদের আসল বাড়ি এখনও আছে। তারা পরিকল্পিতভাবে বনভূমি দখল করতে এসেছে।”
প্রশাসন ইতিমধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে দাইয়াং রেমা বনাঞ্চলে জরিপ শুরু করেছে। সিলোনিজান, দয়ালপুর, পিঠাঘাট ও খেরবাড়ি এলাকাকে অবৈধ দখল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এই এলাকাগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৪–৫ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সম্পন্ন হবে।”
পাইকান উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাহুল গান্ধী আগের দিন গোপালপাড়ায় সভা করেছিলেন। তার পরেই কিছু লোক পাইকানে ফিরে গিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়।” তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস সাংবাদিকদেরও বিভ্রান্ত করেছে এবং রাহুল গান্ধীর সাক্ষাৎকারের নামে ১৮ জন সাংবাদিককে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “যদি রাহুল গান্ধী না আসতেন, তাহলে পাইকানে সংঘর্ষ হত না। আমি আমার পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিন্তু কংগ্রেস যদি লোকজনকে উস্কে দেয়, সেটা তাদের দায়িত্ব।”
পাইকান সংঘর্ষে ২১ জন পুলিশ আহত, একজন দখলদার নিহত এবং দুইজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং এলাকা সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে বৃক্ষরোপণ শুরু হবে।
লাখিমপুরে নতুন করে দখলদারি শুরু হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে নতুন বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে তাদের নিজ এলাকায় ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি স্পষ্ট করে দেন, বনভূমি, VGR বা PGR জমি থেকে উচ্ছেদ করা ব্যক্তিদের কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে উচ্ছেদ হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এই উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে রাজ্যে উত্তেজনা বাড়লেও সরকার জমি পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।