October 12, 2025
17

গত দুই দশকে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (CML) চিকিৎসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। একসময় প্রাণঘাতী বলে বিবেচিত এই রক্তের ক্যান্সার এখন মৌখিক ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, CML-কে ‘সমাধান হয়ে গেছে’ এমন ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বিশেষ করে ভারতের তরুণ রোগীদের ক্ষেত্রে।

ভগবান মহাবীর ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র হেমাটোলজিস্ট ডা. উপেন্দ্র শর্মা জানান, “অনেকেই মনে করেন CML চিকিৎসা শুরু হলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে বহু রোগী চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো অতিক্রম করতে পারেন না। অনেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে প্রথম সারির ওষুধ বন্ধ করতে বাধ্য হন বা পরিবর্তন করতে হয়।”

ভারতে CML আক্রান্তদের গড় বয়স ৩৫–৪০ বছর, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে এটি ৫০–৬০ বছর। এই সময়ে রোগীরা কর্মজীবন গড়ে তুলছেন, পরিবার চালাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছেন। ফলে চিকিৎসা শুধু জীবন রক্ষার বিষয় নয়, বরং মানসিক সুস্থতা, কর্মক্ষমতা এবং দৈনন্দিন স্বাধীনতা বজায় রাখার বিষয়ও।

প্রথমদিকে চিকিৎসার লক্ষ্য ছিল Major Molecular Response (MMR) অর্জন। বর্তমানে চিকিৎসকরা Deep Molecular Response (DMR) অর্জনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, যা Treatment-Free Remission (TFR) এর সম্ভাবনা তৈরি করে—অর্থাৎ রোগী চিকিৎসা ছাড়াই পর্যবেক্ষণের অধীনে সুস্থ থাকতে পারেন।

তবে বহু রোগী প্রথম বছরে MMR অর্জন করতে ব্যর্থ হন এবং দ্বিতীয় বছরে DMR অর্জন করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া—যেমন ক্লান্তি, গাঁটের ব্যথা, হজমের সমস্যা—যা রোগীরা প্রায়ই চুপচাপ সহ্য করেন, কিন্তু তা জীবনের মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি চিকিৎসা বন্ধ বা পরিবর্তনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভারতের রোগীদের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শুধু ওষুধ নয়, বরং মানসিক সহায়তা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত। CML এখনও একটি নিয়ন্ত্রিত রোগ, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়ে গেছে—এই ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *