
নয়াদিল্লি, ২ জুলাই ২০২৫ — ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় ওষুধ মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (CDSCO)-কে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এই বিষয়ে দায়ের হওয়া মামলাটি নিষ্পত্তি করে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য ও গবেষণাপত্র সিডিএসসিও-র কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার উপাধ্যায় এবং বিচারপতি তুষার রাও গেডেলা-র বেঞ্চে শুনানিকালে আবেদনকারী জিতেন্দ্র চৌকসির পক্ষে জানানো হয়, গ্লুকাগন-লাইক পেপটাইড-১ রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট (GLP-1 RA) শ্রেণির ওষুধ—বিশেষত সেমাগ্লুটাইড (Ozempic), টিরজেপাটাইড (Mounjaro) এবং লিরাগ্লুটাইড (Victoza)—মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হলেও, বর্তমানে এগুলিকে ওজন কমানোর ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিপুল হারে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবেদনে দাবি করা হয়, এই ওষুধগুলির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতে যথাযথ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, নিরাপত্তা মূল্যায়ন বা নিয়ন্ত্রক তদারকি অনুসরণ করা হয়নি। এতে প্যানক্রিয়াটাইটিস, থাইরয়েড ও অগ্ন্যাশয় ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়বিক জটিলতা এবং বিপাকীয় সমস্যা সহ একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, এই ধরনের ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিশেষ করে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই জিম বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে “ম্যাজিক ফর্মুলা” হিসেবে প্রচার, জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। বিচারপতি গেডেলা মন্তব্য করেন, “এই ধরনের ঘটনা পুলিশকে জানানো উচিত।”
আবেদনকারী আদালতের কাছে অনুরোধ করেন, এই ওষুধগুলির অ-ডায়াবেটিক ব্যবহারের অনুমোদন স্থগিত করা হোক, অফ-লেবেল প্রচার নিষিদ্ধ করা হোক এবং একটি কার্যকর ফার্মাকোভিজিল্যান্স ব্যবস্থা চালু করা হোক। যদিও আদালত এই বিষয়ে সরাসরি নির্দেশ দেয়নি, তবে সিডিএসসিও-কে তিন মাসের মধ্যে আবেদনকারীর উপস্থাপিত তথ্য পর্যালোচনা করে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই মামলার প্রেক্ষিতে ভারতে ওষুধ অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্দেশ ওষুধ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।