
মানব শরীর সম্পর্কে বোঝাপড়ায় বড় এক অগ্রগতি এসেছে। নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মানুষের গলায় লুকিয়ে থাকা এক নতুন ধরনের লালা গ্রন্থি আবিষ্কার করেছেন, যা আগে কখনও শনাক্ত হয়নি। এই নতুন গ্রন্থির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিউবারিয়াল স্যালিভারি গ্ল্যান্ড’।
গবেষণার সময় মূলত প্রস্টেট ক্যানসারের উপর কাজ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। তখনই হঠাৎ এই অজানা গ্রন্থিগুলোর খোঁজ মেলে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই গ্রন্থিগুলো নাসোফ্যারিঞ্জ অঞ্চলে অবস্থিত, যা নাকের পেছনের অংশ এবং গলার ওপরের অংশকে ঘিরে থাকে।
অন্তত একশো জন রোগীর শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে এই গ্রন্থির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা। এই আবিষ্কারকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে ক্যানসারের রেডিয়েশন থেরাপির সময় এর তাৎপর্য অপরিসীম।
রেডিয়েশন থেরাপির সময় মুখ ও গলার প্রধান লালা গ্রন্থিগুলোকে রক্ষা করা হয়, যাতে রোগীর মুখ ও গলা অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায় এবং খাবার খেতে বা কথা বলতে অসুবিধা না হয়। কিন্তু এতদিন এই গোপন গ্রন্থিগুলোর অস্তিত্ব জানা না থাকায়, সেগুলো রেডিয়েশনের ক্ষতির সম্মুখীন হতো এবং রোগীর শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিত।
এই নতুন গ্রন্থিগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসকেরা রেডিয়েশন থেরাপির পরিকল্পনায় এগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, ফলে রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি, এটি ভবিষ্যতে মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসা কৌশলে নতুন দিশা দেখাতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কার শুধু শারীরবৃত্তীয় জ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, বরং ক্যানসার চিকিৎসার পদ্ধতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিতে পারে। বর্তমানে গ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা ও অন্যান্য সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আরও গভীর গবেষণা চলছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, মানবদেহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখনও সম্পূর্ণ নয়। গবেষণা যত গভীরে যাচ্ছে, ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভবিষ্যতকে আরও সমৃদ্ধ করছে।