October 13, 2025
SIL 1

গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্টদের একচেটিয়া আধিপত্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে ভারতের ডিজিটাল দুনিয়ায়। আত্মনির্ভর ভারতের ডাক এখন শুধু উৎপাদন খাতে নয়, প্রযুক্তির জগতেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সার্চ ইঞ্জিন, ম্যাপিং, মেসেজিং, এমনকি অফিস সফটওয়্যারেও এখন ভারতীয় বিকল্প অ্যাপ তৈরি করছে দেশীয় সংস্থাগুলি।

দেশের প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম এখন Mappls (MapMyIndia)। এটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় ডেভেলপারদের তৈরি একটি ন্যাভিগেশন অ্যাপ, যাকে গুগল ম্যাপসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটিতে রয়েছে ৩ডি জংশন ভিউ ও রিয়েল টাইম ট্রাফিক অ্যালার্ট,  দুর্ঘটনা সতর্কতা ও নিরাপদ রুট সাজেশন, লাইভ লোকেশন শেয়ারিং ও অফলাইন নেভিগেশন সুবিধা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব Mappls-কে “ভারতের নিজস্ব মানচিত্র ব্যবস্থা” বলে প্রশংসা করেছেন।

সূত্র অনুযায়ী, ভারতীয় রেলওয়ে Mappls-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করতে চলেছে, যাতে দেশের ট্রেন রুট, স্টেশন ও যাত্রাপথের তথ্য Mappls-এর মাধ্যমে সহজলভ্য হয়। পাশাপাশি চেন্নাই-ভিত্তিক সংস্থা Zoho Corporation তৈরি করেছে মেসেজিং অ্যাপ Arattai, যা হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও গুগল চ্যাটের বিকল্প হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অ্যাপটি ইতিমধ্যেই ৫ মিলিয়নের বেশি ডাউনলোড ছাড়িয়েছে। এতে রয়েছে — এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, ফ্রি ভয়েস ও ভিডিও কলিং, গ্রুপ চ্যাট, ফাইল শেয়ারিং ও ক্লাউড ব্যাকআপ সুবিধা। Zoho-র প্রতিষ্ঠাতা শ্রীধর ভেম্বু জানিয়েছেন, “ভারতের তথ্য ও যোগাযোগ পরিকাঠামোকে আত্মনির্ভর করতে চাই। Arattai সেই দিকেই এক বড় পদক্ষেপ।”

সার্চ ইঞ্জিন খাতে গুগলের একচেটিয়া প্রভাবকে ভাঙার চেষ্টায় নেমেছে ভারতীয় স্টার্টআপ Nofrills AI। কোম্পানির দাবি, এটি এমন এক “হাইব্রিড সার্চ ইঞ্জিন”, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) একসঙ্গে কাজ করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী শুধু কীওয়ার্ড নয়, স্বাভাবিক ভাষায় প্রশ্ন লিখলেই সরাসরি উত্তর ও ওয়েব রেফারেন্স পাবে।

ভারতের স্থানীয় ভাষাভিত্তিক অ্যাপ Dailyhunt ও Josh এখন গ্রামীণ ও শহুরে দুই স্তরেই সমান জনপ্রিয়। Dailyhunt ব্যবহারকারীদের মাতৃভাষায় সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করছে, অন্যদিকে Josh স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে TikTok-এর বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে। দুই অ্যাপই ভারতীয় স্টার্টআপের উদাহরণ, যারা বিদেশি প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক ইতিমধ্যেই দেশীয় অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। “Made in India, Made for the World” স্লোগানে ভারত এখন নিজস্ব ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাইছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক বছরে দেশীয় সার্চ ইঞ্জিন, ক্লাউড স্টোরেজ, ইমেল সার্ভিস ও ভিডিও প্ল্যাটফর্মও তৈরি হতে পারে — যা গুগল, অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।

প্রযুক্তির দুনিয়ায় ভারতের আত্মনির্ভর অভিযাত্রা এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। গুগল বা মাইক্রোসফটের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের এই দেশীয় উদ্যোগ ভবিষ্যতের ডিজিটাল স্বাধীনতার মেরুদণ্ড হতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *