
লখিমপুর, ৩ জুলাই ২০২৫ — আসামের লখিমপুর জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালানো এক বৃহৎ উচ্ছেদ অভিযানে চারটি পৃথক স্থানে প্রায় ২৩৫ বিঘা সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। অভিযানে কমপক্ষে ২২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উচ্ছেদকৃত জমিগুলি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছিল একাধিক পরিবার। প্রশাসনের দাবি, এই জমিগুলি মূলত সরকারি সংরক্ষিত বনভূমি ও কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ছিল, যেখানে অবৈধ নির্মাণ ও বসতি গড়ে তোলা হয়েছিল।
উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালিত হয়:
- মোজুলি গ্রাম
- আধাসোনা এলাকা
- চান্দমারি ডাম্পিং গ্রাউন্ড সংলগ্ন অঞ্চল
- পাভো রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ
এই এলাকাগুলিতে বুলডোজার ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে ঘরবাড়ি, দোকান, টিনের ছাউনি ও অন্যান্য কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানের আগে নোটিশ জারি করে যথাযথ সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল।
লখিমপুরের জেলা শাসক সুমিত সত্তাওয়ান বলেন, “সরকারি জমি দখল করে বসবাস করা বেআইনি। আমরা বহুবার নোটিশ দিয়েছি, আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি।”
তিনি আরও জানান, উচ্ছেদকৃত জমিগুলি ভবিষ্যতে পরিবেশ সংরক্ষণ, কৃষি উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে বসবাস করছেন এবং তাঁদের কাছে জমির দলিল বা কর প্রদানের প্রমাণ রয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, “আমাদের কথা শোনা হয়নি, বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই উচ্ছেদ অভিযানকে “মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবর্জিত” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং দাবি করেছে, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাময়িক ত্রাণ শিবির ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়টি রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনাধীন।
এই উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে লখিমপুরে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রশাসন বলছে, এটি আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির দাবি, এটি জীবনধারণের অধিকার লঙ্ঘন।