
ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর পেছনে রয়েছে জিনগত কারণ, অতিরিক্ত মদ্যপান, মানসিক চাপ, অনিদ্রা এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। এমনকি যারা সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করছেন, তাদের মধ্যেও হৃদরোগে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর মহাপরিচালক ড. রাজীব ভাল জানিয়েছেন, প্রায় ২০ শতাংশ হৃদরোগজনিত মৃত্যুর পেছনে রয়েছে জিনগত ত্রুটি। বিশেষ করে “ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া” এবং “এলিভেটেড লিপোপ্রোটিন (a)”—এই দুটি জিনগত সমস্যা তরুণদের হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ভারতে ৪০ বছরের নিচে হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া দায়ী বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ, এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম—বিশেষ করে জিনগত ত্রুটি থাকলে—হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
চাকরি, পড়াশোনা, এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপ তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়াচ্ছে। এই মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এবং অনেকেই ধূমপান, অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত খাওয়ার মতো ক্ষতিকর অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা সুস্থ হৃদয় রক্ষায় ছয়টি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, ধূমপান পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ধ্যান বা মেডিটেশন।
ড. জে.পি.এস. সাওয়ানি, দিল্লির এক শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন, বলেন—“জিনগত হৃদরোগ শনাক্ত করতে প্রাথমিক স্ক্রিনিং এবং পরিবারভিত্তিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যায়, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।”
এই প্রবণতা রোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এবং তরুণদের মধ্যে জীবনধারার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।