
গুয়াহাটি/শিলচর/কোকরাঝার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ — অসমের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কাছাড় ও কোকরাঝার জেলায় একাধিক ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যাঁরা জাল ডিগ্রি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের চিকিৎসা করে আসছিলেন।
কাছাড়ে ভুয়া দন্ত চিকিৎসক ধরা পড়লেন ক্লিনিকে রোগী দেখার সময়
শিলচরের তারাপুর ও মসজিদ কমপ্লেক্স এলাকায় অবস্থিত হাজারি ডেন্টাল ক্লিনিক ও মজুমদার ডেন্টাল ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুই ভুয়া দন্ত চিকিৎসককে গ্রেফতার করে। ধৃতরা হলেন—মধুরবন্দের কামরুল ইসলাম হাজারি (৫০) এবং মালুগ্রামের টিনকু মজুমদার (৫৩)। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈধ ডিগ্রি ছাড়াই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখছিলেন। কাছাড়ের এসএসপি নুমাল মহত্তা জানান, “একজন প্রায় ১০ বছর ধরে ক্লিনিক চালাচ্ছিলেন। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের হাতেনাতে ধরেছি।”
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর, কাটিগড়ার মীর হুসেইন আহমেদ বারভুইয়া (২৩) নামক এক যুবককে শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে ভুয়া গাইনোকোলজিস্ট হিসেবে রোগী দেখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একটি অনলাইন স্টেথোস্কোপ কিনে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেন। একইভাবে, ১ সেপ্টেম্বর বাদরপুরের পুলক মালাকার (৪৩) নামক এক ব্যক্তি জাল এমবিবিএস ডিগ্রি ও নথি ব্যবহার করে চিকিৎসা করছিলেন বলে ধরা পড়েন।
কোকরাঝারে ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ ধরা পড়লেন জাতীয় মোবাইল ইউনিটে চাকরি নিয়ে
কোকরাঝার শহরের তিতাগুড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার হন অনিসুর রহমান, যিনি বঙাইগাঁও জেলার অভয়পুরির ভদিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জোরহাট থেকে হোমিওপ্যাথি ডিগ্রি অর্জন করলেও জাতীয় মোবাইল ইউনিট স্বাস্থ্য পরিষেবায় এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে চাকরি নেন, জাল ডিগ্রি ব্যবহার করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজা গুলেনুর জানান, “তদন্তে জানা যায়, তিনি কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে চাকরি নিয়েছিলেন।” তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা সংকট, প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের দাবি
এই ঘটনাগুলি অসমের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গভীর আস্থার সংকট তৈরি করেছে। চিকিৎসা পেশার মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে এমন প্রতারণা শুধু রোগীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে না, বরং গোটা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে। প্রশাসন জানিয়েছে, এই ধরনের জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং তদন্তের মাধ্যমে বৃহত্তর চক্রকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এই কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা পরিষেবার মান ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।