
শুধু ভারতবর্ষেই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় গণেশ পুজো। হাজার বছরের ঐতিহ্যকে সামনে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা ভগবান গণেশের আরাধনায় মেতে ওঠেন, শিক্ষা, জ্ঞান, সমৃদ্ধি ও শুভ সূচনার জন্য প্রার্থনা জানান।
প্রাচীনকাল থেকেই ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ করে বালি দ্বীপ হিন্দু সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। প্রতি বছর গণেশ চতুর্থী ঘিরে উৎসবের ব্যাপকতা ভারতবর্ষের মতোই হয়। শুধু বালি নয়, জাকার্তা, সুমাত্রা ও যোগ্যাকার্তাতেও ছোট-বড় আয়োজন হয়, যেখানে স্থানীয় মানুষ যেমন ভিড় করে, তেমনি পর্যটকরাও উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে।
সকাল থেকেই মন্দির ও পুজোমণ্ডপগুলোতে শুরু হয় মন্ত্রোচ্চারণ, পুজো-অর্চনা ও বিশেষ যজ্ঞ। সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় ভজন, নৃত্যনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীরা গণেশের জীবনকথা, শিক্ষা ও পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে মনোমুগ্ধকর নৃত্য-নাট্য পরিবেশন করে, যা ভক্তদের আবেগপ্রবণ করে তোলে।
এই বছরের বিশেষ আকর্ষণ ছিল জাকার্তার কেন্দ্রীয় পুজোমণ্ডপে নির্মিত বিশাল গণেশ প্রতিমা। পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে প্রতিমা গড়ায় পরিবেশবাদীরা প্রশংসা জানান। পুজোর পর প্রসাদ বিতরণে শিশু থেকে প্রবীণ—সকলের মধ্যে ছিল সমান উৎসাহ।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন এই উৎসবকে ঘিরে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে। নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি যানবাহন চলাচলেও বিশেষ নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষরাও শুভেচ্ছা জানিয়ে মন্দিরে আসেন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
উল্লেখযোগ্য, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতীক ‘গারুড়া পান্চশিলা’-র কেন্দ্রে ভগবান গণেশের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রভাব কতটা গভীর।
ভক্তদের আশা, ভগবান গণেশ তাদের জীবনে নতুন আলো, শক্তি ও প্রেরণা নিয়ে আসবে। আর ইন্দোনেশিয়া প্রমাণ করল আবারও—ধর্ম, জাতি, ভাষা আলাদা হলেও উৎসব মানুষকে একত্রিত করে, সম্প্রীতি ও ঐক্যের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে।