August 6, 2025
18

ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা (টিবি) দুটি ভিন্ন রোগ হলেও, এদের মধ্যে একটি মারাত্মক যোগসূত্র রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ডায়াবেটিস শুধু যক্ষ্মার ঝুঁকিই বাড়ায় না, বরং যক্ষ্মা হলে তার চিকিৎসার কার্যকারিতাও ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের যক্ষ্মা হলে চিকিৎসার ব্যর্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ রোগীদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এই প্রতিবেদনটি ডায়াবেটিস কীভাবে যক্ষ্মাকে আরও জটিল করে তোলে এবং এর প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

ডায়াবেটিস মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। উচ্চ রক্ত শর্করা (high blood sugar) টি-কোষ (T-cells) এবং ম্যাক্রোফাজ (macrophages)-এর মতো রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা যক্ষ্মার জীবাণু (Mycobacterium tuberculosis) প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য। ফলে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু সহজে প্রবেশ করতে পারে এবং সক্রিয় টিবি রোগে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের যক্ষ্মার চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এর কারণগুলো হলো: কম ওষুধ শোষণ: ডায়াবেটিস রোগীদের হজম ও শোষণ ক্ষমতা কিছুটা পরিবর্তিত হয়, যার ফলে যক্ষ্মার ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। ওষুধগুলো রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছাতে পারে না।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু যক্ষ্মার ওষুধ, যেমন রিফাম্পিসিন, রক্ত শর্করার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, ইনসুলিন বা মুখের মাধ্যমে নেওয়া ডায়াবেটিসের ওষুধগুলোর সাথে যক্ষ্মার ওষুধের প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা: ডায়াবেটিসের কারণে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যক্ষ্মার জীবাণুকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে চিকিৎসা দীর্ঘায়িত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগটি বারবার ফিরে আসে (relapse)।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা একইসাথে থাকলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ওষুধের কার্যকারিতার অভাব এবং যক্ষ্মার সংক্রমণের ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়।

ই দুটি রোগের ভয়াবহতা কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:

  • যৌথ স্ক্রিনিং: ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত যক্ষ্মার জন্য এবং যক্ষ্মা রোগীদের ডায়াবেটিসের জন্য পরীক্ষা করানো উচিত।
  • সমন্বিত চিকিৎসা: চিকিৎসা পরিকল্পনা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে যক্ষ্মার ওষুধের পাশাপাশি ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যক্ষ্মার সফল চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: রোগীদের এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এই দুটি রোগের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
  • পুষ্টি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন: সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এই দুটি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস এবং যক্ষ্মা একে অপরের পরিপূরক হয়ে মানব স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে। যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ জরুরি, তেমনি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মার চিকিৎসা সফল করতে হলে তাদের রক্ত শর্করার মাত্রাকেও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই দুটি রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে হলে সমন্বিত এবং সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *