July 23, 2025
18

বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংস্থা মরগান স্ট্যানলি (Morgan Stanley) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ভারত ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ এর অর্থনীতির আকার $১০.৬ ট্রিলিয়নে (১০.৬ লক্ষ কোটি ডলার) পৌঁছাবে। এই পূর্বাভাস ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।

রাজ্যগুলির ভূমিকা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এই সামগ্রিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটক – এই পাঁচটি রাজ্যের প্রত্যেকটির অর্থনীতি প্রায় $১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি ডলার) ছুঁয়ে ফেলবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা তাদের বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির মধ্যে স্থান দেবে। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং তেলেঙ্গানা ভারতের জিডিপি-তে প্রধান অবদানকারী রাজ্য। বিগত পাঁচ বছরে ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ তাদের র‌্যাঙ্কিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে।

প্রতিযোগিতামূলক ফেডারেলিজম: মরগান স্ট্যানলি জোর দিয়েছে যে, ভারতের “প্রতিযোগিতামূলক ফেডারেলিজম” (Competitive Federalism) – যেখানে রাজ্যগুলি ব্যবসা-বান্ধব নীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রতিযোগিতা করে – এই উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজ্যগুলির আর্থিক সুশাসন, নিয়ন্ত্রক সংস্কার এবং বিনিয়োগ প্রচারে সাফল্য নির্ধারণ করবে যে ভারত বিশ্বের “কারখানা” হয়ে উঠবে কিনা এবং আগামী সাত বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হবে কিনা।

অবকাঠামো উন্নয়ন: গত এক দশকে ভারতের ত্বরান্বিত অবকাঠামো সম্প্রসারণকে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির একটি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধন ব্যয় (ক্যাপেক্স) ২০১৫ অর্থবছর-এর জিডিপি-এর ১.৬% থেকে ২০২৫ অর্থবছর-এ ৩.২%-এ দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে, মহাসড়ক নির্মাণে ৬০% বৃদ্ধি, বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ এবং মেট্রো নেটওয়ার্ক চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘পিএম গতি শক্তি’, ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন’, ‘ভারতমালার’ মতো কেন্দ্রীয় সরকারের অবকাঠামো প্রকল্পগুলি রাজ্য-নির্দিষ্ট উদ্যোগগুলির পাশাপাশি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারতের অবদান: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দশকে ভারত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রায় ২০% এর জন্য দায়ী থাকবে, যা বহু বহুজাতিক সংস্থার আয়ের প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে।

জনসংখ্যার সুবিধা: ভারতের বৃহৎ এবং তরুণ জনসংখ্যা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।

মরগান স্ট্যানলির এই প্রতিবেদন ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি অত্যন্ত আশাবাদী চিত্র তুলে ধরেছে। এটি স্পষ্ট করে যে, সঠিক নীতি, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে ভারত দ্রুতগতিতে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এটি কেবল ভারতের জনগণের জন্যই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *