
হাইলাকান্দি, ২৫ জুলাই — দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি জেলার ঘর্মুরা এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের জমি দখলকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক বিদ্যালয়টির ৮ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৭ বিঘা জমি স্থানীয় ছয়জন ব্যক্তি অবৈধভাবে চাষাবাদের জন্য দখল করে নিয়েছেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জমি দখলের ফলে ৩০৯ জন ছাত্রছাত্রীর খেলাধুলা ও বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন, তবে পূর্বে থাকা শিক্ষক কোয়ার্টারগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জমি দখলকারীদের কবলে চলে গেছে।
প্রাক্তন শিক্ষক বিষু কর জানান, ২০২০ সালে বন বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় বন আধিকারিক এন.এইচ. মজুমদার একটি উচ্ছেদ আদেশ জারি করেছিলেন এবং পুলিশ সুপারকে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ২৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত উচ্ছেদ তারিখেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নজরে আনা হয়েছে। জেলা গার্ডিয়ান মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল আশ্বাস দিয়েছেন, জমি পুনরুদ্ধারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি বন বিভাগের একটি দল, যার মধ্যে ছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক কালিদাস সিনহা, রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় কুমার আহির এবং সিলচারের একজন সার্ভেয়ার, জমির পরিদর্শন করেছেন। বিভাগীয় বন আধিকারিক অখিল দত্ত জানিয়েছেন, জমি দখলের বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়েছে, তবে বর্ষার কারণে এলাকা কাদাময় থাকায় শীতকালেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে পারে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার দাস জানান, ২০১৯ সালে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির আয়োজিত এক জনসভায় তৎকালীন জেলা কমিশনারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। কাটলিছড়া বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্করও জেলা প্রশাসককে জমি পুনরুদ্ধারের অনুরোধ জানান।
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান বিজন কুমার দাস বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানটি সীমান্তবর্তী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য একমাত্র শিক্ষার আলো। আজ সেই শিশুদের একটি খেলার মাঠও নেই।”
ঘর্মুরা বিদ্যালয়ের জমি দখল ইস্যু শুধু শিক্ষা নয়, ঐতিহ্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।