August 1, 2025
15

জোরহাট, ৩১শে জুলাই ২০২৫: জোরহাটে এক দিনমজুরের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর নতুন করে নাগরিকত্ব বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা একজন অভিযুক্ত ভূমি দখলদারের পুত্র বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের পরিবারের জমি এবং পরিচয় সংক্রান্ত নথি যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে, যা সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সোমবার রাতে জোরহাটের বালিগাঁও এলাকায় একটি খুনের ঘটনা ঘটে। নিহত দিনমজুরের নাম মনোজ তাঁতি (৪৩)। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিহত মনোজ তাঁতি একটি সরকারি জমির দখলদারিত্ব নিয়ে অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম (৫২)-এর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ঘটনার রাতে মাইনুলের দুই পুত্র, ফকরুল ইসলাম (২৮) এবং আমিরুল ইসলাম (২৫), মনোজকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ফকরুল ইসলাম এবং আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে, এই ঘটনার পর থেকেই মাইনুল ইসলামের ভূমি দখলদারিত্ব এবং তার পরিবারের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

স্থানীয় কিছু সংগঠন এবং এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে মাইনুল ইসলাম অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে বসবাস করছেন। তাদের দাবি, মাইনুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। জোরহাটের জেলা প্রশাসক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে মাইনুল ইসলাম এবং তার পরিবারের সদস্যদের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি তাদের নাগরিকত্ব বা জমির মালিকানায় কোনো অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে, শাসক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে সরকার এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবে এবং আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং তার পরবর্তী নাগরিকত্ব বিতর্ক জোরহাটের স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দিনমজুর সমাজের পক্ষ থেকে নিহত মনোজ তাঁতির পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে, তারা ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মাইনুল ইসলামের ভূমি এবং নাগরিকত্বের নথি যাচাইয়ের পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনাটি আসামে ভূমি দখল এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত চলমান বিতর্কের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *