
নয়াদিল্লি, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত, যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৩ শতাংশেরও বেশি। ‘ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ টুডে’ এবং ‘মেন্টাল হেলথ অ্যাটলাস ২০২৪’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের গভীরতা ও বৈশ্বিক প্রভাব তুলে ধরেছে।
WHO-এর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার রূপান্তর আজকের অন্যতম জরুরি জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। এতে বিনিয়োগ মানে শুধু মানুষের নয়, সমাজ ও অর্থনীতির ভবিষ্যতে বিনিয়োগ।” তিনি আরও বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যেন একটি অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়, সেটি নিশ্চিত করা প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব।”
প্রতিবেদন অনুসারে:
- বিশ্বে নারীদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। বর্তমানে ৫৮১.৫ মিলিয়ন নারী এবং ৫১৩.৯ মিলিয়ন পুরুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
- গর্ভবতী নারী ও সন্তান জন্মের পরবর্তী বছরে নারীদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের হার অত্যন্ত বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জনে ১ জন নারী এই সময়ে বিষণ্ণতায় ভোগেন, যা নিম্ন ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোতে আরও বেশি।
- আত্মহত্যা এখনও একটি মারাত্মক পরিণতি, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭.২৭ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এটি তরুণদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, এবং আত্মহত্যা হ্রাসে অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।
- WHO-এর লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে আত্মহত্যার হার এক-তৃতীয়াংশ কমানোর পরিকল্পনা থাকলেও, বর্তমান হারে তা মাত্র ১২ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
- মানসিক রোগজনিত উৎপাদনশীলতার ক্ষতি বিশ্ব অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি ডেকে আনে, বিশেষত বিষণ্ণতা ও উদ্বেগজনিত সমস্যার কারণে।
প্রতিবেদন আরও জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে মাত্র ৪৫ শতাংশ দেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৭ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় গড়ে মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ২ শতাংশেই স্থির রয়েছে, যেখানে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে এই ব্যয় মাথাপিছু মাত্র $০.০৪।
এই প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দাবি জোরালো করেছে এবং সরকার ও সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। WHO-এর মতে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ এখন আর বিলাসিতা নয়—এটি একটি জরুরি প্রয়োজন।