কোকড়াঝাড় জেলার পোরবোটঝোরা মহকুমার পাগলিঝোরা পার্ট-১ এবং ২ এলাকার গ্রামবাসীরা আদানি গ্রুপকে একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ৩,৬০০ বিঘা জমি বরাদ্দের বিরুদ্ধে এক বিশাল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। গতকাল (বুধবার) তীব্র গরমের মধ্যে উত্তেজিত গ্রামবাসী এবং পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পস্থলের গ্রামবাসীরা পুলিশের ভূমি সীমানা নির্ধারণের প্রচেষ্টার সময় বিক্ষোভে যোগ দেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা আসাম সরকার এবং বিটিআর-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ‘আদানি-ফিরে যাও’ ধ্বনি তোলেন। তারা স্পষ্ট জানান, নিজেদের গ্রাম ছেড়ে যাবেন না এবং সরকারের প্রতি এই প্রকল্পটি রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বোরো, রাভা এবং গারো উপজাতির স্থানীয় গ্রামবাসীরা সংবাদমাধ্যমকে বলেন যে তারা কয়েক দশক ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসছেন, কিন্তু আদানি গ্রুপকে আকস্মিকভাবে ৩,৬০০ বিঘা জমি বরাদ্দ তাদের জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। তারা অভিযোগ করেন যে ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত বিটিসি এলাকার জমি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়, বরং বিটিসি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তাদের মতে, রাজ্য সরকারের অনুরোধে বিটিসি আপস করছে এবং অ-উপজাতি বহিরাগতদের উপজাতি জমি বরাদ্দ ষষ্ঠ তফসিল প্রশাসনের ভূমি আইন ও নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গ্রামবাসীরা বিটিআর সরকারের নমনীয় অবস্থানের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সিইএম প্রমোদ বোরোকে এই বরাদ্দ পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান। তারা আদানি গ্রুপের ৮,০০০ চাকরির প্রস্তাবকে “মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়” বলে অভিহিত করেন। তারা উল্লেখ করেন, আদানি গ্রুপ ভারত জুড়ে তাদের আটটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে মাত্র ৩,৬০০ জনেরও বেশি কর্মচারী নিযুক্ত করেছে, যা স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রতারিত করার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বোডোল্যান্ড জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের (বিজেএসএম) কার্যনির্বাহী সভাপতি, ডিডি নারজারি, আদানি পাওয়ারের কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আদানি পাওয়ার বর্তমানে ভারতে আটটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করে, যার সম্মিলিত স্থাপিত ক্ষমতা ১৫,০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। ৩১শে মার্চ, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত, আদানি পাওয়ার লিমিটেড ভারতে তাদের কার্যক্রমে প্রায় ৩,৩১৫ জনকে নিয়োগ করেছে।
নারজারি আরও বলেন যে, বিদ্যমান আদানি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত অবক্ষয় নির্দেশ করে, যার মধ্যে রয়েছে বায়ু ও জল দূষণ এবং অন্যান্য গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত পরিণতি।
এই পরিস্থিতিতে, পোরবোটঝোরা মহকুমার আওতাধীন কোকরাঝাড় জেলার বাঁশবাড়ি এলাকায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বোরো এবং বাঁশবাড়ি এলাকার অন্যান্য উপজাতি জনগণের জমি, জীবিকা এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকির সৃষ্টি করবে বলে নারজারি মনে করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ষষ্ঠ তফসিল বিটিসি প্রশাসনের অধীনে, অ-উপজাতি বহিরাগতদের জমি বরাদ্দ করার অধিকার কারও নেই। তিনি আদিবাসীদের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাতিলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন।
এদিকে, বিটিসির স্থানীয় এমসিএলএ মুন মুন ব্রহ্মা গতকাল (বুধবার) বিটিসির প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, যেখানে আদানি কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এই স্মারকলিপিটি বাশবাড়ি ভূমি সুরক্ষা কমিটি, কোকরাঝাড় জেলা গাঁওবুরা অ্যাসোসিয়েশন, বনসু, আতসু এবং বিজেএসএম দ্বারা সমর্থিত হয়েছে।
