
অসমের বরাক উপত্যকার বিকল্প রেলপথ—বিশেষত লংকা থেকে শিলচর পর্যন্ত সংযোগ—বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থান, সীমিত প্রবেশপথ এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে।
বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগের একমাত্র স্থলপথ হল শিলিগুড়ি করিডর, যা “চিকেনস নেক” নামে পরিচিত। এই সংকীর্ণ করিডর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নিরাপত্তাজনিত কারণে সহজেই বিপর্যস্ত হতে পারে। অতীতে বাংলাদেশ হয়ে বিকল্প ট্রানজিট রুটের সম্ভাবনা থাকলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সেই পথ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার শিলং–শিলচর চার লেনের জাতীয় সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি বিকল্প রেলপথের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। লংকা–শিলচর রেলপথ বরাক উপত্যকার অভ্যন্তরীণ সংযোগকে আরও দৃঢ় করবে এবং মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মণিপুরের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত যোগাযোগে গতি আনবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিকল্প রেলপথ কেবলমাত্র যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনের সুবিধা বাড়াবে না, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে এবং ভারত সরকারের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্থানীয় সংগঠন ও নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে এই রেলপথের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে, কারণ বরাক উপত্যকার উন্নয়নের অন্যতম প্রধান বাধা হল দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষাকালে শিলং রোড বন্ধ হয়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা এবং যাতায়াতের অসুবিধা এই দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
সরকার যদি দ্রুত এই বিকল্প রেলপথের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তাহলে তা উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং পরিবহন ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।