July 31, 2025
17

লন্ডন, ৩০ জুলাই, ২০২৫ – সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে রেস্টুরেন্টের মেনুতে উচ্চমাত্রার লবণের বিষয়ে সতর্কীকরণ চিহ্ন থাকা জরুরি। এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভোক্তারা স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে উৎসাহিত হবেন এবং এর মাধ্যমে কিডনি ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, মেনুতে লবণের পরিমাণ সম্পর্কে সতর্কীকরণ চিহ্ন থাকলে ভোক্তারা উচ্চ লবণের খাবার অর্ডার করা থেকে বিরত থাকেন এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেন। এটি এমন একটি জনস্বাস্থ্য কৌশল যা কার্যকর এবং সহজেই বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষণায় অনলাইন এবং একটি বাস্তব রেস্টুরেন্ট সেটিং-এ দুটি পৃথক পরীক্ষা চালানো হয়।

  • অনলাইন পরীক্ষা: ২,৩৯১ জন ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্কদের উপর পরিচালিত এই অনলাইন পরীক্ষায় দেখা যায় যে, মেনুতে লবণের সতর্কীকরণ চিহ্ন দেখে অংশগ্রহণকারীরা উচ্চ লবণের খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হন। এর ফলে প্রতিবার খাবারে গড় লবণ গ্রহণের পরিমাণ ০.২৬ গ্রাম কমে যায়।
  • বাস্তব রেস্টুরেন্ট পরীক্ষা: লিভারপুলের একটি রেস্টুরেন্টে ৪৫৪ জন অংশগ্রহণকারীর উপর পরিচালিত বাস্তব পরীক্ষায় একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়। যারা সতর্কীকরণ চিহ্নযুক্ত মেনু পেয়েছিলেন, তারা সাধারণ মেনুপ্রাপ্তদের তুলনায় গড়ে ০.৫৪ গ্রাম কম লবণ গ্রহণ করেছেন।

উভয় পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই সতর্কীকরণ চিহ্নগুলো বয়স, লিঙ্গ বা শিক্ষাগত যোগ্যতার নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের উপর সমানভাবে কার্যকর। এটি প্রমাণ করে যে এই পদ্ধতি স্বাস্থ্য বৈষম্য বাড়াবে না, বরং সবার জন্য উপকারী হবে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকির সঙ্গে লবণের সম্পর্ক:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিদিন ৫ গ্রামের কম লবণ (প্রায় এক চা চামচ) গ্রহণের সুপারিশ করে। কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ এর থেকে অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করে, যার একটি বড় অংশ আসে রেস্টুরেন্ট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় (হাইপারটেনশন), যা স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের প্রধান কারণ। প্রতি বছর অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.৮৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।

নীতিগত পরিবর্তনের আহ্বান:

গবেষণার প্রধান গবেষক ড. রেবেকা ইভান্স বলেন, “আমাদের গবেষণা প্রমাণ করেছে যে রেস্টুরেন্টের মেনুতে সতর্কীকরণ চিহ্ন যুক্ত করা হলে মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেয়। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ যেহেতু ডায়েট-সম্পর্কিত রোগের একটি প্রধান কারণ, তাই এই ধরনের নীতি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “জনসাধারণও এই ধরনের নীতিকে সমর্থন করে। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী সরকারি নীতি হিসেবে মেনুতে লবণের সতর্কীকরণ চিহ্ন কার্যকর করার পক্ষে মত দিয়েছেন।”

‘অ্যাকশন অন সল্ট’ (Action on Salt) নামক সংস্থার গবেষক সোনিয়া পম্বো এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি প্রমাণ করে যে মেনুতে পরিষ্কার এবং দৃশ্যমান লবণ সতর্কীকরণ চিহ্ন থাকলে তা ভোক্তাদের পছন্দের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং লবণ গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বাইরের খাবার এখন আর কেবল মাঝে মাঝে খাওয়ার বিষয় নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অংশ। অথচ এই খাবারগুলোতে প্রায়শই অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ থাকে, যা আমাদের অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করে।”

এই গবেষণার ফলাফল নীতি-নির্ধারকদের কাছে একটি জোরালো বার্তা দিচ্ছে যে, জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রেস্টুরেন্ট এবং খাদ্য শিল্পে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি প্রণয়ন করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *