
ভারতীয় প্রতিরক্ষা ইতিহাসে নতুন মাইলফলক তৈরি হতে চলেছে। ফরাসি সংস্থা Dassault Aviation এবং দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান Tata Advanced Systems Limited (TASL) যৌথ উদ্যোগে হায়দরাবাদে শুরু করছে রাফাল যুদ্ধবিমানের ফিউজেলাজ তৈরির কাজ।
এখন পর্যন্ত ভারত ফ্রান্স থেকে সরাসরি ৩৬টি রাফাল কিনেছে। সেগুলি ইতিমধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার অংশ। কিন্তু এবার যুদ্ধবিমান তৈরির মূল কাঠামোই ভারতে গড়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে ভারত প্রযুক্তি স্থানান্তর (technology transfer) পাবে, যা ভবিষ্যতে পুরো যুদ্ধবিমান তৈরির পথ প্রশস্ত করবে। আগামী ২০২৭-২৮ সালের মধ্যেই প্রথম ভারতীয় মাটিতে নির্মিত রাফাল ফিউজেলাজ হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুধু প্রতিরক্ষা শক্তিই নয়, এই প্রকল্প দেশীয় অর্থনীতিতেও প্রাণসঞ্চার করবে।
অনুমান করা হচ্ছে, সরাসরি হাজারেরও বেশি উচ্চ দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
পরোক্ষভাবে যুক্ত হবে শতাধিক এমএসএমই ও ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা, যারা যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিক্যাল স্টুডেন্টরা বিশ্বমানের প্রযুক্তির সঙ্গে হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
ফলে রাফাল প্রকল্প শুধু একটি প্রতিরক্ষা উদ্যোগ নয়, বরং এটি ভারতের শিল্পোন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় মাটিতে রাফাল তৈরি শুরু হলে তা স্পষ্ট বার্তা দেবে পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিকে। ইতিমধ্যেই রাফালের উপস্থিতি ভারতীয় বায়ুসেনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। এবার দেশে উৎপাদন শুরু হলে প্রতিরক্ষা শক্তি শুধু বাড়বেই না, ভারতকে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মঞ্চেও নতুন মর্যাদা দেবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য আরও ১১৪টি নতুন রাফাল কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেই চুক্তি হলে দেশে সম্পূর্ণ রাফাল তৈরির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সরকার একে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদে ভারতকে শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নয়, প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও গড়ে তুলতে পারে। একদিকে আকাশে শক্তিশালী হবে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অন্যদিকে মাটিতে গড়ে উঠবে হাজারো মানুষের জীবিকা।