
আজ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক, অমর শিল্পী মহানায়ক উত্তম কুমারের ৯৯তম জন্মদিবস। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কোটি ভক্তের হৃদয়ে তিনি যে আসন অধিকার করে আছেন, তা আজও অটল, অমলিন। বাংলা সিনেমার সোনালি অধ্যায়ে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং গৌরবের সঙ্গে।
দিনটিকে ঘিরে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে চলছে নানা আয়োজন। শহরের সাংস্কৃতিক মঞ্চে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠান আবার সামাজিক মাধ্যমে ভেসে আসছে অসংখ্য শ্রদ্ধার্ঘ্য বার্তা। বাংলার বাইরে প্রবাসী বাঙালিরাও তাঁদের প্রিয় মহানায়ককে স্মরণ করছেন কবিতা, গান ও আলোচনা সভার মাধ্যমে।
বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন—
“উত্তম কুমার শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। একশো বছর পরও তিনি আমাদের কাছে মহানায়কই থেকে যাবেন। তাঁর মতো কিংবদন্তি আর আসেননি, আসবেনও না।”
১৯২৬ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়, যিনি পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্রে অমর নাম উত্তম কুমার হিসেবে পরিচিতি পান। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। তবে প্রাথমিক জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তবেই তিনি পৌঁছেছিলেন রূপালি পর্দায়।
১৯৪৮ সালে ‘মায়াডোর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর সিনেমায় অভিষেক হলেও প্রথম দিকে সেভাবে সাফল্য পাননি। কিন্তু দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস আর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি দর্শকের হৃদয় জয় করতে শুরু করেন।
১৯৫০ থেকে ১৯৮০—এই তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে কার্যত একচ্ছত্র রাজত্ব করেছেন উত্তম কুমার। রোম্যান্টিক, পারিবারিক, সামাজিক, অ্যাকশন—প্রতিটি চরিত্রেই তিনি ছিলেন অনবদ্য। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তাঁর জুটি আজও দর্শকের কাছে স্বপ্নের রূপকথা। তাঁদের অভিনীত ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাগরিকা’, ‘চাওয়া পাওয়া’ প্রভৃতি ছবি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
বাংলা ছবির পাশাপাশি তিনি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেন ও সাফল্য পান। ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় “চিত্তচরিত্র” ছবিতে অসামান্য অভিনয়ের জন্য তিনি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এটাই ছিল প্রথমবার কোনো বাঙালি অভিনেতার এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি লাভ।
উত্তম কুমার কেবল অভিনেতা নন—তিনি ছিলেন বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি দর্শকদের হাসি, কান্না, ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণার উপহার দিয়েছেন। তাই আজও যখন বাংলা সিনেমার কথা ওঠে, প্রথমেই উচ্চারিত হয় ‘মহানায়ক’ নামটি।