July 20, 2025
17

কৈলাশহর, ১৫ জুলাই ২০২৫ — ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার মানু ভ্যালি চা বাগান, যা রাজ্যের মোট চা উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সরবরাহ করে, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রমিক সংকটের কারণে মারাত্মক উৎপাদন হ্রাসের মুখে পড়েছে। গত তিন বছরে উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ায় বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

চা বাগানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক প্রবীর দে জানান, ২০২২ সালে যেখানে উৎপাদন ছিল ২৪ লক্ষ কেজি, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২২ লক্ষ কেজিতে এবং ২০২৪ সালে আরও কমে ২১ লক্ষ কেজিতে পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হতো, এখন তা এপ্রিল থেকে শুরু হয় এবং মে-জুনে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে চা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে মানু ভ্যালি বাগান কর্তৃপক্ষ সবুজ চা উৎপাদন বন্ধ করে শুধুমাত্র অরথোডক্স চায়ে মনোনিবেশ করেছে। শ্রমিক সংকটও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে—নিবন্ধিত ৯০০ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৩০০ জন নিয়মিত কাজে আসেন। অনেক শ্রমিক কম মজুরির কারণে এমজিএনআরইজিএ বা অন্যান্য কর্মসংস্থানে চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক ₹২০৪ মজুরি পান, সঙ্গে পিএফ, বোনাস, গ্র্যাচুইটি, চিকিৎসা ভাতা ও রেশন সুবিধা রয়েছে।

শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় বাগান কর্তৃপক্ষ ৫০টি চা পাতা সংগ্রহকারী যন্ত্র কিনেছে এবং ১০০ জন আদিবাসী গ্রামবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তবে প্রবীর দে বলেন, “মানবিকভাবে পাতা সংগ্রহই ভালো মানের চা উৎপাদনের জন্য শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি।”

চা উৎপাদনের খরচ ক্রমাগত বাড়ছে, বর্তমানে প্রতি কেজি উৎপাদনে ₹১৮০-এর বেশি খরচ হচ্ছে, অথচ নিলাম বাজারে বিক্রয়মূল্য ₹২০৬-এ স্থির রয়েছে। পরিবহন ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং অসমের তুলনায় ত্রিপুরায় কম সরকারি সহায়তা চা শিল্পকে আরও চাপে ফেলেছে। তবে আগরতলায় একটি চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য স্বস্তি আনতে পারে বলে মনে করছেন দে।

৩১৮ হেক্টর বিস্তৃত এই বাগানে প্রায় ৪০ লক্ষ চা গাছ রয়েছে, যার মধ্যে প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে প্রায় ২% গাছ মারা যায়। এই ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর ৫–১০ হেক্টর জমিতে পুনরোপণ করা হচ্ছে।

ত্রিপুরার চা শিল্পের ভবিষ্যৎ রক্ষায় এখন জরুরি ভিত্তিতে নীতিগত ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *