
ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন ই-কমার্স জায়ান্ট ফ্লিপকার্ট ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) থেকে ঋণ দেওয়ার লাইসেন্স পেয়েছে। এর ফলে ফ্লিপকার্ট এখন সরাসরি তার প্ল্যাটফর্মে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের ঋণ প্রদান করতে পারবে। রয়টার্স ও একটি সূত্রের পর্যালোচনা করা নথি থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
এই প্রথমবার ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দেশের কোনো বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে নন-ব্যাংক ফাইন্যান্স কোম্পানি (NBFC) লাইসেন্স দিল, যা তাদের আমানত গ্রহণ না করেও ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেয়। বর্তমানে বেশিরভাগ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যাংক ও NBFC-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঋণ দেয়। তবে এই লাইসেন্স পাওয়ার ফলে ফ্লিপকার্ট সরাসরি ঋণ দিতে সক্ষম হবে, যা তাদের জন্য আরও লাভজনক একটি মডেল তৈরি করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৩ মার্চ ফ্লিপকার্ট ফাইন্যান্স প্রাইভেট লিমিটেডকে তাদের নিবন্ধনের শংসাপত্র জারি করেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কোম্পানিকে NBFC হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রয়টার্স ১৩ মার্চ তারিখের এই নিবন্ধন সনদ ও অনুমোদন পত্রের একটি কপি পর্যালোচনা করেছে। এই অনুমোদনের খবর আগে প্রকাশিত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পত্র অনুযায়ী, ফ্লিপকার্ট, যেখানে মার্কিন খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্টের ৮০ শতাংশেরও বেশি অংশীদারিত্ব রয়েছে, ২০২২ সালে এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল।
রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধের পর ফ্লিপকার্ট বা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কেউই তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, ই-কমার্স জায়ান্টটি “কয়েক মাসের মধ্যে” তাদের ঋণ কার্যক্রম শুরু করতে পারে। তবে, মূল ব্যবস্থাপনা কর্মী ও বোর্ড সদস্যদের নিয়োগ এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার মতো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই কার্যক্রম শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ফ্লিপকার্ট তাদের জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং ফিনটেক অ্যাপ super.money-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের সরাসরি ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা প্ল্যাটফর্মে বিক্রেতাদেরও অর্থায়ন প্রদান করতে পারে।
বর্তমানে ফ্লিপকার্ট অ্যাক্সিস ব্যাংক, আইডিএফসি ব্যাংক ও ক্রেডিট সাইসনের মতো ঋণদাতাদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করে। সর্বশেষ ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফ্লিপকার্ট ২০২৪ সালে ওয়ালমার্টের নেতৃত্বে ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের পর তাদের হোল্ডিং কোম্পানি সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে স্থানান্তরিত করছে। ওয়ালমার্ট ১৭ বছর বয়সী এই কোম্পানিকে জনসমক্ষে নিয়ে আসারও (IPO) লক্ষ্য রাখছে।
২০১৮ সালে ওয়ালমার্ট ফ্লিপকার্টের একটি নিয়ন্ত্রক অংশীদারিত্ব কিনে নেয়, যার ফলে তারা ফিনটেক সংস্থা ফোনপে-র মালিকানাও পায়, যা বর্তমানে IPO-র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বছরের শুরুতে ফ্লিপকার্টের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজন বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক একটি নন-ব্যাংক ঋণদাতা অ্যাক্সিও অধিগ্রহণ করে, কিন্তু সেই চুক্তিটি এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি।